‘বর্জ্য’ প্লাস্টিকে কোটি টাকার পণ্য!

0 372

চট্টগ্রাম সংলাপ প্রতিবেদক: পরিত্যক্ত বোতল কিংবা ভাঙা প্লাস্টিকও এখন সম্পদ হয়ে উঠছে। এসব ‘বর্জ্য’ প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। এছাড়া বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে এসব প্লাস্টিক বর্জ্য। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরো বিকাশ সম্ভব।

জানা যায়, দেশে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি ও বিভিন্ন কোমল পানীয়ের বোতল ফেলা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্যের ঠাঁই হয় রাস্তায় বা ডাস্টবিনে। কিন্তু দিনে দিনে এই বর্জ্য পরিণত হচ্ছে সম্পদে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে হাজার হাজার মানুষ এই বর্জ্যরে সাথে জড়িয়ে গেছে। এর একটি বড় অংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশেও তৈরি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টিকের বর্জ্য এবং বোতলগুলো কুড়িয়ে জড়ো করা হয়। চট্টগ্রামের দুইশজনের মতো ব্যবসায়ী এসব প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে নেন। প্রতি কেজি ৮ টাকা থেকে শুরু করে ৩৮ টাকা পর্যন্ত দরে কেনা হয় এসব বর্জ্য। পরবর্তীতে বর্জ্যগুলো ধানের কলের মতো মেশিনে ভেঙে টুকরো করা হয়। ছোট ছোট এসব টুকরোর বেশ কিছু অংশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। রাজধানীকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব প্লাস্টিক বর্জ্য বিদেশে রপ্তানির সাথে জড়িত।

অপরদিকে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা প্লাস্টিক কারখানায় এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নতুন করে বালতি, মগ, জগ, চেয়ারসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়। তৈরি করা হয় বিভিন্ন খেলনা। বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানা এসব বর্জ্য কিনে নেয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্লাস্টিক কারখানাগুলো আগে বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের গুটি এনে প্রক্রিয়াজাত করে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করত। এতে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যেত। এখন দেশীয় বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে অনেক কারখানা প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করছে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

মোহাম্মদ সাবের হোসেন নামের একজন প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবসায়ী জানান, পথেঘাটে এবং নালা নর্দমায় পড়ে থাকা এসব প্লাস্টিক বর্জ্য কুড়িয়ে আনা হয়। এগুলো পরিষ্কার করে আমাদের কাছে বিক্রি করা হয়। আমরা প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য কিনে সেগুলো মেশিনে দিয়ে ভাঙিয়ে নিই। পরবর্তীতে যা প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হয় প্লাস্টিকের গুটি। এটা নতুন করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় নানা পণ্য। এখানে দুই-তিন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকে।

পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবেশের বড় উপকার করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, কোটি কোটি বোতলসহ প্লাস্টিক বর্জ্য যদি খাল, নদী দখল করত, তাহলে তা পলিথিনের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠত।

মুরাদপুরের একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করে নতুন পণ্য তৈরি করি। এতে দেশে প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদার প্রায় পুরোটাই মিটে যাচ্ছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে কয়েকশ কারখানায় এই ধরনের প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয় বলে জানান তিনি।