
পাহাড়ে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার
চট্টগ্রাম সংলাপ প্রতিবেদন: সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের হাওয়া লেগেছে পার্বত্য চট্টগ্রামেও। নানা উন্নয়ন উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সার্বিক দৃশ্যপট। উন্নত হচ্ছে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, পর্যটনে খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই পার্বত্য এলাকায় নতুন দুই বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প দুটি হলো- কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্প এবং রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচরে চেংগী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৭৮ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বালুখালী-ঘুনধুম সীমান্ত সংযোগ সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৫৯ ফুট। এই মহাসড়কটি নির্মাণে সাত দশমিক ৫৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। পাঁচটি কালভার্ট, সাইড ড্রেন এবং ক্রস ড্রেনের কাজও এতে রয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, এ সড়কটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে সড়কটি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। সড়কটি সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে বর্ষাকালে যখন কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর বৃদ্ধি পায়, তখন অনেক সময় দেশীয় ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে পানির স্তর কমে যাওয়ায় এসব নৌযান চলাচলে বাধার সম্মুখীন হয়। এ পরিস্থিতিতে জেলা সদরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এই অঞ্চলের মানুষের রাঙামাটি জেলা সদর কিংবা চট্টগ্রামে যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হতো। বছরের বেশিরভাগ সময় এ জনপদের মানুষ তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাত।
সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ৫০০ মিটার দীর্ঘ নানিয়ারচর সেতুটি নির্মাণের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। যা ভবিষ্যতে লংগদু উপজেলা হয়ে মারিষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নে আরও বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরমধ্যে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, বান্দরবান পৌরসভা ও লামা পৌরসভার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে মাস্টার ড্রেইন নির্মাণ প্রকল্প এবং খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সড়কসহ ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জেলা সদরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মাস্টার ড্রেইন নির্মাণ প্রকল্পও।
এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় তুলা চাষ বৃদ্ধি, প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (দ্বিতীয় পর্যায়), রাঙামাটি পৌরসভাসহ সব উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও উন্নয়ন, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সেচ ড্রেন নির্মাণ, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাথুরে এলাকায় জিএফএস ও বিভিন্ন এলাকায় ডিপটিউবওয়েলের মাধ্যমে সুপেয় পানীয়জল সরবরাহ নিয়েও কাজ করছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে যাবে। যার সুফল পাবে পর্যটন খাত, আরও এগিয়ে যাবে দেশ।